ইন্দো ইউরোপীয় বলতে কি বুঝায়? ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা বংশের শাখা

ইন্দো ইউরোপীয় বলতে কি বুঝায় এবং ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা বংশের শাখা

ভাষা পরিবারঃ

একটি ভাষা পরিবার বলতে উৎপত্তিগত ভাবে সম্পর্কিত একাধিক ভাষাকে বোঝায়। বেশীর ভাগ ভাষাই কোনও না কোনও ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। বিশ্বে প্রায় ১০০ এর বেশি ভাষা পরিবার বিদ্যমান রয়েছে।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা বলতে কি বুঝায়?

পৃথিবীর সমস্ত ভাষাকে কয়েকটি ভাষাবৃক্ষে বিভক্ত করা হয়। এই ভাষা বৃক্ষ গুলোর মূল ভাষার ইন্দো-ইউরোপীয় নামটি কাল্পনিক। ভারতীয় উপমহাদেশে থেকে ইউরোপ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সব ভাষাকে এই মূলভাষা বা ভাষাবংশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ বা মূলভাষাকে প্রধান দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা: কেন্তুম ও শতম। বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের শতম শাখার একটি ভাষা।

ভাষাবংশঃ

দুইটি ভিন্ন অঞ্চল বা ভূখণ্ডের ভাষা একরকম হলে সেটিকে এটি ভাষা না বলে একটি ভাষাবংশ বলা হয়। যেমন – প্রাচীন ইন্দো বা ভারতীয় উপমহাদেশের ভাষার সাথে প্রাচীন ইউরোপের ভাষার মিল থাকায় এই দুই অঞ্চলের প্রাচীন ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা বংশ নামে পরিচিত এই “ইন্দো-ইউরোপীয়” ভাষা বংশের পরিধি ছিল ভারত থেকে ইউরোপ পর্যন্ত। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশে ইন্দো একটি ভূখণ্ড ও ইউরোপীয় আরেকটি পৃথক ভূখণ্ডে বিভক্ত হওয়াই এই ভাষাবংশ টিকে দুটি শাখাতে ভাগ করা হয়। একটি হচ্ছে “শতম” ও আরেকটি “কেন্তুম” ।

বাংলা ভাষার উৎপত্তি

কেন্তম ও শতম বলতে কি বুঝায় ?

শতম:- ইন্দো – ইউরোপীয় যে ভাষাগুলোর “ক” ধ্বনি “শ” বা “স” ধ্বনিতে পরিণত হয়েছে তাদেরকে বলা হয় শতম।
যেমন – সংস্কৃত – শতম
লিথুনীয় – শিমতাস
প্রাচীন শ্লাভীয় – সুতো ইত্যাদি।

কেন্তম:- যে ভাষা গুলোর ক্ষেত্রে “ক” কণ্ঠ্য ধ্বনি হিসেবে রয়ে গেছে অর্থাৎ “ক” ধ্বনির উচ্চারণে কোনো পরিবর্তন আসে নি সেগুলোকে বলা হয় কেন্তম।
যেমন – ল্যাটিন – কেন্তম
ওয়েলশ – কন্ত
গ্রীক – হোকাতন
আইরিশ – কেত
তুখারীয় – কত।

ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা বংশের শাখাঃ

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা থেকে জাত ভাষা শাখাগুলো কী কী?

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহ পৃথিবীর আদি ভাষা পরিবারের মধ্যে একটি। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার এর অন্তর্গত ভাষা ও উপভাষাসমূহ বিশ্বের ছয়টি মহাদেশে পাওয়া যায়। বেশির ভাগ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ায় বিবর্তন হয়েছে। যেমনঃ হিন্দি,বাংলা, ইংরেজি, লাতিন, ফার্সি ও রুশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক অনেক ভাষা এই পরিবারের অন্তর্গত।

পৃথিবীতে যতগুলি ভাষা বংশ বা ভাষা পরিবার আছে, তাদের মধ্যে ইন্দো-ইউরোপীয়ই শ্রেষ্ঠ। আনুমানিক ৫০০০ খ্রিষ্ট্রপূর্বাব্দে কক্ষিণ রাশিয়ার উরাল পর্বতের পাদদেশে (মতান্তরে মধ্য ইউরোপে) এই ভাষা পরিবারের আদি ভাষার জন্ম। যে মূল ভাষা (Parent Language) থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর ভাষার কোনো নিদর্শন (পত্মলিপি বা গ্রন্থ) এখনও পর্যন্ত আবিস্কৃত হয় নি। তাই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার আদি রূপ আমরা জানতে পারি নি। সেকারণেই, সেই মূল ভাষা-উদ্ভূত প্রাচীন ভাষাগুলি (যেমন বৈদিক, আবেস্তীয়, গ্রিক, লাতিন, প্রাচীন পারসিক ইত্যাদি) মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করে মূল ভাষার একটি অনুমান-নির্ভর রূপ খাড়া করা হয়েছে। আনুমানিক ২৫০০ খ্রিষ্ট্রপূর্বাব্দ নাগাদ মূল ইন্দো-ইউরোপীয় জাতি আর্যরা তাদের আদি বাসস্থান থেকে ক্রমশ এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে মূল আর্যভাষা থেকে ক্রমশ দশটি প্রাচীন ভাষা শাখার জন্ম হয়-

(১) ইন্দো-ইরানীয় (Indo-Iranian)

(২) বালতো-স্লাভিক (Balto-slavic) –

(৩) আলবানীয় (Albanian),

(৪) আর্মেনীয় (Armenian),

(৫) গ্রিক (Greek),

(৬) ইতালিক (Italic)

(৭) কেলতিক (Celtic),

(৮) জার্মানিক (Germanic)

(৯) তোখারীয় (Tokharian) এবং

(১০) হিত্তীয় (Hittite)

প্রথম চারটি কেন্তুম (Centum) বর্গের এবং শেষ ৬টি শতম (Satam) বর্গের ভাষা শাখা।

 

বাঙালি জাতির উদ্ভব ও পরিচিতি সম্পর্কে পড়ুন।

বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন ।

ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয় আলোচনা পড়ুন ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *